বর্তমান সময়ের আলোচিত ধর্মীয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর।

শুক্রবার বেলা ১১টার পর নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নুর বলেন, মিজানুর রহমান আজহারী বর্তমানে নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ও আলোচক। ওয়াজ মাহফিলের নাম্বার ওয়ান মাওলানা।

‘তিনি যেখানেই যান সেখানেই উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে তরুণরা তার মাহফিলে ভিড় জমাচ্ছে। উনার মাহফিলে যত লোক হয় এরকম সচরাচর আর কোনো আলেম ওলামার মাহফিলে আমি এত লোক দেখিনি।’

ভিপি নুর বলেন, আমি তার ওয়াজ মাহফিল সরাসরি দেখিনি। তবে ফেসবুক, স্যোশাল মিডিয়া ও ইউটিউবে তার ওয়াজ শুনে অনুধাবন করতে পেরেছি- বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে দিন দিন ইসলামি ধর্মাবলম্বী ও ইসলাম প্রিয় মানুষের কাছে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন তিনি।

‘বাংলাদেশে ছোট বাচ্চারাসহ বৃদ্ধরাও যারা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করেন তারাও আজহারীর পরিচয় জেনে গেছেন। ফেসবুকে ও ইউটিউবে তার ওয়াজ মাহফিলের যে ভিউ হয় তাতে অস্বীকার করার উপায় নাই যে তিনি একজন জনপ্রিয় বক্তা।’

নুর বলেন, সমস্যা হলো বর্তমান সময়ে আজহারী আলোচনায় এসেছেন। আমাদের ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর এক বক্তব্যে শুনতে পেলাম তিনি নাকি জামায়াতের লোক।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তাকে পছন্দ করি বা অপছন্দ করি সেটা মুখ্য বিষয় না। বাংলাদেশে যারা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করে বা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তাদের কাছে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

আজহারীর জনপ্রিয়তার কারণ উল্লেখ করে ডাকসু ভিপি বলেন, গতানুগতিক ওয়াজ মাহফিলের তুলনায় তার ওয়াজ মহাফিল ভিন্ন ধাচের হয়ে থাকে। সমকালীন প্রসঙ্গ, প্রযুক্তি, আধুনিক বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।

‘বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা, অনেকেই বলেন টিভি দেখা যাবে না- এসব বিতকির্ত বিষয়ে নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করেন তিনি।’

ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর সমালোচনা করে নুর বলেন, তিনি (আজহারী) যদি জামায়াতের লোক হয়ে থাকেন তবে সেটির সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর উপস্থাপন করা উচিৎ ছিল। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তিনি যদি কোনো ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে থাকেন বা বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে থাকেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

‘কিন্তু কথা নেই বার্তা নেই, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো,’ যোগ করেন তিনি।

নুর আরও বলেন, বিবিসির একটা নিউজ মারফত জানতে পারলাম, তিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন এবং কাছের লোকজন স্বীকার করেছেন তিনি এই মুহূর্তে দেশে নাই। তিনি দেশ ছেড়েছেন। নিউজটি যেভাবে করা হয়ে সেটা পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে হয় তো।

তিনি আরও বলেন, আজহারী যদি সরকারের বাইরে ভিন্নমতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে থাকেন কিংবা ভিন্নমতের অনুসারী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তিনি যে কাজটি করে যাচ্ছিলেন বর্তমান সময়ে সেটি আমি ব্যক্তিগতভাবে বিরোধিতা করি না। কারণ সবকিছুর পরে প্রত্যেকেরই একটি ব্যক্তিগত উপলব্ধি আছে, দৃষ্টিভঙ্গি আছে।

আজহারীর আলোচনা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল এবং তার আলোচনার খুবই প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ডাকসু ভিপি।

নুর বলেন, আমাদের সমাজে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ চরম অবক্ষয় ধারণ করেছে। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ নারী যেখানে ধর্ষণের শিকার হয়, স্বামী স্ত্রীর হাতে নিহত হয়, যেখানে পারিবারিক অশান্তি, মানুষের মধ্যে অস্থিরতা, মানুষে মানুষে সহিংসতা কিংবা রাজনীতি বা ধর্মের নামে মানুষ খুন, উগ্রতা হচ্ছে সেই সময়ে এরকম একজন ধর্মীয় বক্তার প্রয়োজন আছে সমাজে।

‘এছাড়া ইসলামের বিভিন্ন বিষয়কে আজহারী যেভাবে মানুষের মাঝে আলোচনা করেন, সমকালীন প্রসঙ্গকে কানেক্ট করেন সে বিষয়টি আমার কাছে খুবই চমৎকার মনে হয়েছে।’

ডাকসু ভিপি বলেন, তরুণরা তার ওয়াজ মাহফিলের বড় একটা অংশ। যেহেতু আমাদের দেশ মুসলিম অধ্যুষিত। এখানে মুসলমানের সংখ্যাটাই বেশি। তাই আজহারীর ওয়াজের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে বা ইসলাম ধর্মের মানুষের মধ্যে বিনয়, সহনশীলতা, মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধ-এই বিষয়গুলো যদি নতুন করে জাগরণ করতে পারতাম, সেটি আমাদের জন্য একটা পজিটিভ বার্তা হতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *